বাঙালি জাতি তথা মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর রাত ২৫ মার্চ। ১৯৭১ সালের এ রাতে বাঙালির জীবনে এক বিভীষিকাময় রাত নেমে এসেছিল। বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কাপুরুষের মতো মধ্যরাতে পূর্ব পাকিস্তানে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়।
আন্দোলনরত বাঙালিদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে ঢাকা ও এর আশপাশে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইয়াহিয়ার লেলিয়ে দেয়া কুলাঙ্গাররা।
পূর্বপরিকল্পিত অপারেশন সার্চলাইটের নীলনকশা অনুযায়ী তারা ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটনায়। বর্বর হত্যাযজ্ঞের দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে।
‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে ২৫ মার্চের কালরাত্রির বর্ণনার এক জায়গায় শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বলেছেন, ‘ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ ভীষণ শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। চমকে উঠে বসলাম। রুমী-জামী ছুটে এলো এ ঘরে। কী ব্যাপার? দু- তিন রকমের শব্দ- ভারি বোমার বুমবুম আওয়াজ, মেশিনগানের ঠা ঠা ঠা ঠা ঠা আওয়াজ, চিঁ-ই-ই-ই আরেকটা শব্দ। আকাশে কি যেন জ্বলে উঠছে, তার আলোয় ঘরের ভেতর পর্যন্ত আলোকিত হয়ে উঠছে। সবাই ছুটলাম ছাদে। আমাদের বাড়ির দক্ষিণ দিকের মাঠ পেরিয়ে ইকবাল হল, মুহসীন হল, আরও কয়েকটা হল, ইউনিভার্সিটি কোয়ার্টার্সের কয়েকটা বিল্ডিং। বেশিরভাগ আওয়াজ সেদিক থেকে আসছে, সেই সঙ্গে বহু কণ্ঠের আর্তনাদ, চিৎকার।
‘
প্রতিথযশা চিত্রশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ তার ‘আমার মুক্তিযুদ্ধ’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘২৫ মার্চের পর আমার বাবা-মা এই প্রথম ঘরের বাইরে এলেন। আর আমি একা একা কলাবাগানের বাসা থেকে বের হয়ে বাইরের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছি।
জানার চেষ্টা করছি, ভয়াবহতা কতটুকু চলেছে। প্রথমেই আমি গ্রিন রোডের দিকে গেলাম। ওখানে গিয়ে দেখি রিকশায় তিনটি লাশ পড়ে আছে। রিকশাওয়ালা আর দু’জন যাত্রী। তিনজনেই লুঙ্গি পরা। মনটা খারাপ হয়ে গেল ভীষণ। খুব ছোটাছুটি করতে লাগলাম। এরপর গেলাম সায়েন্স ল্যাবরেটরির দিকে। ওখানেও দেখলাম ৪-৫টা লাশ পড়ে আছে। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে মিরপুর রোডে গেলাম। সেখানে দেখি ট্রাকভর্তি হেলমেট পরা অস্ত্রধারী পাকিস্তানি সৈন্য।’
২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন। তার ডাকে দেশের সর্বত্র সশস্ত্র সংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। অকুতোভয় বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি বীর শহীদদের যাদের রক্তের বিনিময় আজকে আমাদের এই বাংলাদেশ।