২৯শে জুলাই
সাল ২০১৯
বাইশ বছর বয়সী উপমা আজ তার
পঞ্চম সন্তানের প্রসব করতে যাচ্ছে।
এর আগে যে চারটি বাচ্চার জন্ম দেয় সবগুলোই ছিল মৃত। শেষবারের মতো হলেও সে এবার সফল। ৪র্থ বার এমন হওয়ার পর ডাক্তার বলেছিলেন, সে তার বাচ্চা নেওয়ার ক্ষমতা হারাবার আগে তাকে অনেকটা সময় বিশ্রামে রাখতে। এবারের মতো আর চেষ্টা না করতে এতে উপমা’র জীবনে ঝুঁকি আসতে পারে।কিন্তু চুয়াল্লিশ বছর বয়সী অমিত রায় তার বংশ বৃদ্ধির জন্য উপমা’র কথা একটুও ভাবেন নি।
প্রথম পর্ব পড়ুন : অভিশপ্ত আত্মা (১ম পর্ব) -শুভ্র ভৌমিক জয়।
অমিতের সারা শরীর সিউরে উঠলো। সে আত্মনাথ করে কোনো রকম বাড়ির আঙ্গিনায় পা রাখলো। হয়তো বা সময় পেড়িয়ে যাচ্ছে বলেই অমিতকে এই ভয়ানক সংকেত দিয়ে যাচ্ছে ঐই আগুন্তক আত্মা।অন্যদিকে আমাদের সবার অজানা এক রহস্য ফাঁস হতে থাকলো।
উপমা’র চার সন্তান মৃত জন্মায় নি। তাদের মেরে ফেলা হয়েছিলো। পঞ্চময়ী’কেও মরতে হবে। পাঁচ বছরের ৫ম তম দিনের শেষ রাতটা তার জন্য মৃত্যু অপেক্ষা করছে।
উপমার চার সন্তানের মৃত্যু রহস্য হয়ে থাকছে সবার সামনে। সবার কাছে এই শিশুগুলোর মৃত্যুর জন্য শুধু উপমা দায়ী।সে মৃত বাচ্চা জন্ম দেয়। মূলত এই চার নব-জাতকের মৃত্যু শুধু সাধনার জন্য দিতে হয় অমিতকে তার মায়ের কাছে।এরা তো নিষ্পাপ এদের আয়ুতে সাধনা পূর্ণ পায়। আর তাই তাদের জীবন ত্যাগের মধ্য দিয়েই তারা তাদের সাধনায় পূর্নফল লাভ করবে।
অভিশপ্ত আত্মা (২য় পর্ব) -শুভ্র ভৌমিক জয়
আর একটি কথা বলে রাখি তোদের সকল কাজ শেষ হওয়ার পর ক্রমাগত ভাবে ঐই চার সন্তানকে যেভাবে হত্যা করেছিলি ঠিক সেইভাবে ৫ম সন্তানকেও মেরে ফেলতে হবে। তা না হলে তোদের সকল কার্য সম্পাদন হবে না আর তোরাও সফল হবি না। তবে আবারও বলে রাখছি, কাজটা শেষ করা তোদের জন্য সহজ হবে না আর তাকে হত্যা সে তো অনেকটা আলাদিনের মতো!
সেইদিকে তাদের এই কথাগুলো শুনে থমকে যায় উপমা। এমন কোনো পিতাও কি আছে যে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মেয়েকে এইভাবে বলি দেওয়া কথা ভাবতেও পারে?
অমিত আমার সন্তানের পিতা হওয়ার যোগ্য নয়! ভাবতে লাগলো উপমা। যে এখনো পর্যন্ত এই পৃথিবীর আলো দেখেনি তাকেই খুন করার তারিখ ঠিক হয়ে গেছে।
অভিশপ্ত আত্মা (৩য় পর্ব )- শুভ্র ভৌমিক জয়
উপমা কান্না কণ্ঠে নির্বাক হয়ে বসে পড়লো।
ভাবতেই পারছে না সে অমিত কী করে ওদের খোঁজ পেয়েছে?উপমা বোকার স্বর্গে বাস করছে। ও কখনোই অমিতের থেকে দূরে যেতে পারেনি। আমিত নিজে ওদের দূরে সরিয়ে রাখছে। কাছে থাকলে যদি কখনো ভুল হয়ে যেতো?
আমিতের সব কিছুতেই এক প্রকার প্রস্তুতিতে ছিল। চুল পেকেছে মানুষের মাথায় কাঁঠাল ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে তার প্রস্তুতি কাঁচা হবার নয়।
সমস্ত কিছু নিজের হাতে রেখেই নাচিয়েছে উপমাকে।উমার যখন ঘুম ভাঙে তখন সে দেখে একটা নরম বিছানায় শুয়ে আছে সে।
শিমুল তুলোর তৈরি বালিশে মাথা রেখে। কীভাবে ঘুমিয়ে পড়ছে সে নিজেও বুঝতে পারেনি।
চারপাশে মানুষ সবাই নানান কথা বলছে। কেউ কেউ বলছে দেখো অমিতের পঞ্চময়ী এসেছে। নীল চোখে মায়াবী শক্তির আভাসও যেনো ভাসঁছে। ছল ছল চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে উমা।কাউকেই চিনে না সে। কান্নাও করছে না সে। কেমন যেন অনুভব করছে চারপাশের হাহাকার কানভাঙা জোরালো শব্দ।
অভিশপ্ত আত্মা (৪র্থ পর্ব) – শুভ্র ভৌমিক জয়।
আঁতকে ওঠলেন অমিত। কি বলছে ও এগুলো? ওকি তবে সবাইকে সবকিছু বলে দিবে?ওর কাছে তো মায়াবী শক্তি আছে। ওর এসব তো জানারই কথা। আর ওর মা না বললেও এসব হওয়ার কথা।কেননা ওর শক্তি ওকে কখনো ছায়া হতে দিবে না যতই ও নিজেকে লুকিয়ে রাখুক। পাশ থেকে ফিসফিস করে অমিতের মা বলল,” অমিত পঞ্চময়ীই কি এ লাশ এখানে এনেছে?উপমা এসেই উমাকে নিয়ে ঘরে ভিতরে চলে যায় সবাই ফিসফিস করছে “উমা আসলে কি জানে?
অমিত তাদের চুপ করানোর জন্য বললো। ইস্ ! কি বিশ্রী গন্ধ এগুলোকে সরাও আগে। মুহূর্তের মধ্যেই সবাই নাকে কাপড় দিয়ে লাশ দুটোকে তুলে কদম গাছের নিচেই চাপা দিয়ে রাখে। সেইদিন রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখনও অমিত জেগে আছে। লাশ দুটো যে তার খুবই দরকার। শাবল আর দা নিয়ে সে চললো কদমগাছের নিচে। চকচক করছে মাটি। দুর্গন্ধে ভেজা বাতাসে কেউ ফিসফিস করছে। আর বলছে “আমাদের জন্মের শুরুতেই মৃত্যু! মৃত্যুতেও নেই সুখ! পাপিষ্ঠ বাপ ছাড়ল না আমাকেও!অমিতের শরীরের পশম গুলো কাটা দিয়ে উঠে। থমকে যায় অমিত। চারপাশে শুধু সেইসব শব্দে মাতিয়ে তুলছে তাকে। তবুও বুকের উপর পাথর চাপা দিয়ে মাটি খুঁড়ে লাশ দুটো উঠিয়ে নেয় সে।
অভিশপ্ত আত্মা( ৫ম পর্ব) – শুভ্র ভৌমিক জয়।
একশো টুকরোর দুটি লাশ! লাশ দুটি সেই মানুষদের যারা উপমা আর উমার সমস্ত
কর্মকাণ্ডের নজরদারি করত। অমিতের বিশাল বাড়ির সেই পাহাড়াদার গুলো। সেই রাতের অন্ধকারে উপমার ক্রোধের শিকার হয় তারা।সম্পূর্ণ একশো টুকরো করে তাদের চেহারার আকৃতি বিকৃত করে আতংক সৃষ্টি করতে চেয়েছিলো।সেই সব মানুষদের মনে যারা নিস্পাপ একটি মেয়ের ক্ষতি করার ভাবনা ওদের মাথায়ও না আসে। সব সময় যেন ওদের চেহারার মাঝে এই সমস্ত ভয় লুকিয়ে থাকে। ভয়ানক এক মৃত্যু ভয়!
খুন করেই উপমা উমাকে নিয়ে এই গ্রামের সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছিলো। তারমধ্যেই বাড়ির সকলের সামনে চলে আসে ভয়ানক লাশ দুটো। চারদিকে খোঁজ চালিয়ে মহাসড়ক থেকে উদ্ধার করে উপমা আর উমাকে।
এতক্ষনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো অমিত। লাশ দুটো যদি উপমা আর উমার হতো তাহলে তার কখনোই অমরত্ব লাভ করা হতো না।
কিন্তু এ ভয় তার মনে একটুও প্রভাব বিস্তার করে নি। উপমা পাষাণ অমিতের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে দীর্ঘ সময় ধরে।সে ভাবছে, মানুষ তো এক মাটির পুতুল মাত্র।
অভিশপ্ত আত্মা(৬ষ্ঠ পর্ব)- শুভ্র ভৌমিক জয়
উমার সেই বরের প্রয়োগে ধংস হলো অভিশপ্তদের ধর্মশালাসহ আদি বাদশা ও দানবেরা। বাকি রইলো অমিত ও তার মা ।
ঐই চার সন্তানের হত্যাকারী রুপে এখন উমার সামনে দাঁড়িয়ে। উমার ভয়ানক চোবল তাদের আর বাচঁতে দেয় নি। অবশেষে শেষ হলো ভয়ানক এই আগুন খেলা।
মুক্ত অবস্থায় উপমাকে সেই বাড়িতে রেখে দেয় উমা। আর অবিনব শরীর নিয়ে তান্ত্রিক কবিরাজ বিলিন হয়ে যায় অসীম আকাশে। আর উপমা উমাকে মাটিতে পায় অজ্ঞান অবস্থায়। উমার শারীরিক বিশ্রাম দরকার সাথে জ্ঞান ফেরাটাও। এখন তো মধ্যরাত!
অভিশপ্ত আত্মা(সপ্তম ও শেষ পর্ব)- শুভ্র ভৌমিক জয়।